ঘটনাটি সামান্য হলেও তা ভারতে ব্যপক সাড়া জাগিয়েছে। বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলেরই আর একটি রাষ্ট্রদূতের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন, যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটা রুটিন বৈঠক। কিন্তু ঢাকায় গত ৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নতুন কমিশনার সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে ভারতে যে পরিমাণ আলোচনা ও চর্চা হচ্ছে, তা প্রায় নজিরবিহীন।
আরও পড়ুনঃ ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০১৯’ পাচ্ছেন বিশিষ্ট পাঁচ নারী
শেখ হাসিনা পাকিস্তানি দূতকে জানান যে, ‘১৯৭১-র ঘটনা আমরা কখনও ভুলতে পারবো না। আমাদের হৃদয়ে সেই যন্ত্রণা চিরকাল রয়ে যাবে।’
ভারতের কূটনৈতিক মহল ও নীতিনির্ধারকরাও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মন্তব্যকে দারুণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের প্রাক্কালে শেখ হাসিনার এই অবস্থান ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীকেও সুদৃঢ় করবে বলে তারা মনে করছেন।
শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তানের সেই অত্যাচার কখনও ভুলতে পারবে না। ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের ওপর পাকিস্তানের নির্যাতন আমাদের স্মৃতি থেকে কখনও হারাবে না: শেখ হাসিনা’।
গত জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মিনিট পনেরোর ফোনালাপে দিল্লিতে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে সেই ছায়া অনেকটাই কেটে গেলো বলেও দিল্লিতে অনেকে মনে করছেন।
আরও পড়ূনঃ স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করে ভিডিও গেমে মগ্ন!
ভারতের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘একাত্তরের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতা যে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে দেবে না, তা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বক্তব্যের সাথে মিলে যায়।
পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেও তার সেই দৃঢ় অবস্থানেরই প্রতিফলন হয়েছে বলে ড. দত্ত মনে করছেন।
ভারতের নামি নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নেওয়া মেজর জেনারেল হর্ষ কক্কর বলছিলেন, ‘পাকিস্তানকে বাংলাদেশ যে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না, শেখ হাসিনার এই মন্তব্য ইসলামাবাদ বা করাচির মিডিয়াতে কেউ ছাপবেই না। কিন্তু বাস্তবতা এটাই, বাংলাদেশ আজও চায় পাকিস্তান সেই কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক।
ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক নাগরিক শেখ হাসিনার মন্তব্যে ভাল আশ্বাস ব্যক্ত করেন। রাত্রি বোস নামে একজন লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার সাহসিকতার প্রশংসা না-করে পারছি না’। টুইটারে মন্তব্য করেছেন, ‘পাকিস্তানের জন্য এটা বিরাট ধাক্কা সন্দেহ নেই।
তবে ভারতে কেউ কেউ যে একটু অন্য দৃষ্টিতেও বিষয়টি দেখছেন না, তা নয়। ‘দ্য ওয়্যার’ পোর্টাল যেমন লিখেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যে নিজের বাসভবনে পাকিস্তানি দূতের সঙ্গে দেখা করেছেন তাতেই বোঝা যায় দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলছে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ঢাকায় নিযুক্ত প্রাক্তন হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবে আবার এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ যখন যেটা করবে তার পররাষ্ট্র নীতির বিবেচনা থেকে করবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যখন ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন কিংবা যখন বলবেন পাকিস্তানের অপরাধ ভোলার নয়। দুটো ক্ষেত্রেই তার দেশের স্বার্থ বা ভাবনাই কাজ করবে।
আরও পড়ুনঃ অস্বাভাবিকভাবে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতা গ্রেপ্তার
‘আমার মনে হয় না ভারতের সেটা নিয়ে অত পোস্ট মর্টেম করার কিছু আছে’ সরাসরি মন্তব্য বর্ষীয়ান এই সাবেক কূটনীতিবিদের।